গর্ভকালীন অবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা

মা হওয়ার অনুভূতি শুধুমাত্র একজন মাই বলতে পারেন । এই সময় কতটা খুশি কতটা উচ্ছ্বাস কতটা আনন্দ এবং কতটা উদ্বেগ একজন মাকে ঘিরে থাকে সেটা একজন মায়ের মনই বুঝতে পারে।

একজন মাকে মা হওয়ার আনন্দ যেমন সারাক্ষণ ঘিরে থাকে ঠিক তেমনি অনাগত সন্তানের চিন্তায় সারাক্ষণ  উদ্বেগে ও তার মন ভরে থাকে।

একজন মা সারাক্ষণ চিন্তায় এবং উদ্বেগে থাকেন কি করে তার সন্তানের ভালো হবে এবং কোন ভাবে অবচেতন মনে নিজের সন্তানের ক্ষতি হচ্ছে নাতো?  এমন সব হাজারো চিন্তা।

খুশি এবং উৎকণ্ঠা এই দুই একজন মা সারাক্ষণ বিচলিত।

অনাগত সন্তানের চিন্তায় কিংবা খুশিতে একজন মায়ের সময় যেমনই হোক না কেন একজন মায়ের উচিত স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ করা।

তাহলেই নিজের শরীর যেমন ঠিক থাকবে ঠিক তেমনি অনাগত সন্তান সুস্থ হবার সম্ভাবনা অনেক গুণে বেড়ে যায়। তাই প্রতিটি মাকে ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় সুষ্ঠুভাবে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে খাবার গ্রহণ করতে হয় এবং হবে।

মাকে সুস্থ রাখার জন্য অনেকগুলো খাবার রয়েছে । এসব খাবারের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ফল ।

অনেকগুলো ফলের মধ্যে সব ধরনের পুষ্টিগুণ সমানভাবে না পেলেও কলা এমন একটি প্রাকৃতিক দান যার মধ্যে অনেকগুলো সমভাবে সম পরিমাণে রয়েছে। তাই মাতৃত্বকালীন গর্ভাবস্থায় অনেক ধরনের খাবার মায়েরা গ্রহণ করতে অনেক ইচ্ছা থাকলেও যদি প্রতিদিনের খাবার গ্রহণে কলাকে রাখা যায় তাহলে অনেক ধরনের ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

তাই আজ আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করব, গর্ভকালীন অবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে।

প্রকৃতির মধ্যে যত ধরনের ফল আমরা চোখে দেখি বা খাবার হিসেবে থাকে, তার মধ্যে কলাই হলো একটি মাত্র ফল,যার মধ্যে ভিটামিন এর সব পুষ্টিগুণ প্রায় সমানভাবে লক্ষ্য করা যায়।

তাই ভিটামিন এর সকল পুষ্টিগুণের চাহিদা পূরণ করতে কলা কিন্তু একটি আল্লাহর প্রদত্ত নেয়ামত বলতে পারি।

যারা গর্ভাবস্থায় এখনো খোলা খাওয়া শুরু করেননি তারা নিচের উপকারিতাগুলো একবার পড়ে নিন এটি পড়ার পর আপনারা নিশ্চয়ই আপনাদের খাদ্য তালিকায় জায়গা করে দিবেন। চলুন জেনে নিই

গর্ভকালীন অবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা গুলো কি কিঃ

গর্ভকালীন অবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা গুলো নিচে এক এক করে উল্লেখ করা হল……

গর্ভাবস্থায় সন্তান কে সুস্বাস্থ্য ও পরিপূর্ণ ভাবে গড়ে তুলতে কলার উপকারিতাঃ

গর্ভাবস্থায় প্রত্যেকটা মায়ের উচিত অন্তত পক্ষে খাদ্যতালিকায় একটি হলেও কলা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা। কারণ কলাতে যে পরিমাণ ভিটামিন রয়েছে তা যদি গর্ভের সন্তান পেয়ে থাকে তাহলে সন্তান টি হবে সুস্বাস্থ্য ও পরিপূর্ণ দেহের অধিকারী। কারণ তখন সন্তান কোন ভিটামিনের অভাবে পুষ্টিহীনতায় ভোগবেনা।

গর্ভঅবস্থায় বমি বমি ভাব দূর করতে কলার ভূমিকাঃ

প্রায় সকল মায়ের গর্ভাবস্থায় বমি বমি ভাব ও স্বস্তির বা কোন পরিবেশে গেলে সাফোকেটিং এর মতো সমস্যা হয়ে থাকে, আর এই ধরনের সমস্যা থেকে বাঁচার জন্য সব গর্ভাবস্থাকালীন সময় কলা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন।

গর্ভাবস্থায় শরীরে এনার্জি রাখতে কলার গুরুত্বঃ

গর্ভাবস্থায় খুব দ্রুত মহিলারা ক্লান্ত হয়ে পড়ে। একটু কাজ করলেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে, এনার্জি হারিয়ে ফেলে। কিন্তু গর্ভকালীন অবস্থায় কোন নারী বা কোন মা যদি দীর্ঘক্ষন কোন জায়গায় বসে থাকে, তাহলে শরীরের মধ্যে বেড়ে ওঠা শিশুর স্থূলতা বেড়ে যেতে পারে।

তাই গর্ভাবস্থাকালীন সময় প্রত্যেকের উচিত যতটুকু সম্ভব হাঁটাহাঁটি করা।  আর এই হাঁটাহাঁটি করতে গিয়েই বাদে যত সমস্যা। কারণ একটু থেকে একটু হাঁটাহাঁটি করতে গেলে এনার্জি লস হয়ে যায় এবং এনার্জি ফিরিয়ে আনতে গেলে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু একটা পাকা কলা খাওয়ার মধ্য দিয়ে আমরা খুব দ্রুত হারিয়ে যাওয়া এনার্জিকে পূরণ করতে পারি।

কলা অটিস্টিক শিশু জন্ম হওয়ার প্রবণতা হ্রাস করেঃ

অনেক শিশু জন্মের পর বিভিন্ন ধরনের সমস্যা নিয়ে জন্মায়। সেটা হতে পারে শারীরিক সমস্যা অথবা মানসিক সমস্যা। কিন্তু আমরা যদি খাদ্যতালিকায় অন্ততপক্ষে একটি হলেও কলা শিশু গর্ভবস্থায় থাকাকালীন সময় খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারি, তাহলে অটিস্টিক শিশু জন্ম হওয়ার প্রবণতা হ্রাস পায়।

গর্ভাবস্থায় আয়রনের ঘাটতি পূরণ করতে কলার উপকারিতাঃ

আমরা সকলেই জানি রক্তস্বল্পতার অন্যতম কারণ হলো আয়রনের ঘাটতি। আর আয়রনের ঘাটতি পূরণ করতে আমাদের উচিত অন্ততপক্ষে দৈনিক একটি হলেও কলা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলা। আর এর মধ্য দিয়ে আয়রনের অভাব পূরণ হবে এবং আমাদের শরীরের রক্ত শূন্যতার যে সমস্যা তা দূর হয়ে যাবে।

গর্ভবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে পাকা কলার ভূমিকাঃ

কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে পাকা কলা কিন্তু দারুণভাবে কার্যকরী। কাঁচা কলা যেমন ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে অনেক বেশি কার্যকরী একইভাবে পাকা কলা কিন্তু আবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে আমাদেরকে সাহায্য করে থাকে।

গর্ভ কালীনসময় মানসিকভাবে প্রফুল্ল থাকার জন্য কলার উপকারিতাঃ

গর্ভাবস্থায় প্রত্যেকটা মায়ের উচিত শিশু যাতে শারীরিকভাবে ভাল থাকে,  এবং মানসিকভাবে প্রফুল্ল থাকে সে জন্য প্রতিদিন দুধের সাথে অন্তত পক্ষে একটি করে পাকা কলা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা। এতে করে বেড়ে ওঠা শিশুর পুষ্টির কোন দিক দিয়ে কোন অভাব থাকে না।

শরীরের ফোলা ভাব কমিয়ে আনতে কলার উপকারিতাঃ

এমন অনেক নারী আছেন যারা গর্ভাবস্থায় তিন থেকে চার মাসের দিকে গিয়ে তাদের শরীর ফুলে যায়।  অর্থাৎ পায়ের পাতা ফুলে যায় । পায়ের গোড়ালি হাত এরকম জায়গায় ফোলা ভাব চলে আসে।  আবার কারো কারো পুরো শরীরে পানি জমে ফোলা ভাব চলে আসে। কারো যদি গর্ভকালীন অবস্থায় এই রকম ফোলা ভাব বা পানি চলে আসে তাহলে আপনারা লবণ জাতীয় খাবার পরিহার করুন এবং আপনাদের খাদ্যতালিকায় প্রতিদিন একটি করে কলাকে স্থান করে দিন ।  অর্থাৎ প্রতিদিন একটি করে কলা খাবেন। তাহলে আপনাদের শরীরের ফোলা ভাব কমে যাবে।

রক্ত চাপ বজায় রাখতে কলার উপকারিতাঃ

গর্ভাবস্থা চিন্তা নারী সব যে সমস্যা হয় সেটা ওঠানামা করে  রক্তচাপ শরীরে বজায় থাকার জন্য প্রয়োজন পটাশিয়াম আর কলার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে । তাই গর্ব অবস্থায় প্রতি দরকার কলা খাওয়া। এতে করে কোন ওষুধ ছাড়ায় প্রাকৃতিক উপায়ে রক্তচাপ নিয়ম একজন নারী সুস্থ থাকবে ।

গ্যাস্ট্রিক নিয়ন্ত্রণে রাখে বা কমিয়ে আনেঃ

এই সময়ে অনেকের গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয় অর্থাৎ গ্যাস্ট্রিক হয়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবার জন্য গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন একটি করে কলা খান। এই অবস্থায় কলা খেলে গলার মধ্যে থাকা উপাদানগুলো আমাদের শরীরেকে গ্যাস্ট্রিকের উৎপাত হতে রক্ষা করে। তাই যাদের অনেক বেশি গ্যাসের সমস্যা রয়েছে তারা প্রতি একটি কলা খেতে পারেন।

হাড়ের বিকাশ ও মজবুত সহায়তাঃ

আমরা সবাই জানি ক্যালসিয়াম আমাদের শরীরের হাড মজবুত করতে সাহায্য করে। কলার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে যেটি মা ও শিশুর হাড়ের বিকাশে সহায়তা করবে এবং হাড়কে মজবুত করবে।

গর্ভাবস্থায় যদি মায়ের হাড়ের বিকাশে বাধা প্রাপ্ত হয় তাহলে শিশু সঠিক পরিমাণে গর্ভে বেড়ে উঠতে পারবে না তাই গর্ভাবস্থায় হাড়ের বিকাশকে ঠিক রাখার জন্য এবং শিশুর হাড়কে মজবুত রাখার কলা খাওয়া জন্য অত্যন্ত জরুরী ।

হজম শক্তি বাড়িয়ে ক্ষিদে আনেঃ

গর্ভাবস্থায় অনেকেই ক্ষুধামন্দা এ ভুগেন। কলার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন রয়েছে যেগুলো হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে । এই ভিটামিন গুলো হজম শক্তি বাড়িয়ে খিদে নিয়ে আসে। এই কারণে প্রতিদিন একটি করে কলা খেলে গর্ভাবস্থায় নারীরা কি তার হাত থেকে রক্ষা পাবে এবং তাদের যেহেতু প্রচুর পরিমাণে কিতা পাবে তাই তারা খেতেও পারবে যার ফলে মা এবং বাচ্চার কেউই পর্যাপ্ত পুষ্টি অথবা ভিটামিনের অভাবে ভোগবে না ।

নিজের এবং অনাগত সন্তানের কথা মাথায় রেখে একজন মাকে সারাক্ষণই চলা উচিত। কিসে অনাগত সন্তানের ভালো হবে সেটাই করা দরকার একজন মাকে তাই নিজেদের খাদ্য তালিকা কে শক্ত মজবুত এবং পুষ্টিতে পরিপূর্ণ রাখা দরকার। এই দরকারের কথা মাথায় রেখে আমি আপনাদের সাথে কলার গর্ভাবস্থায় কলার উপকারিতা গুলো শেয়ার করলাম।

আপনারা উপকার উপকারিতা উপকারিতার কথা চিন্তা করে প্রতিদিন আপনাদের খাদ্যতালিকায় কলাকে জায়গা করে দিবেন ।

কারণ গর্ভাবস্থায় প্রত্যেকটা নারীরই উচিত খাদ্যতালিকায় কলাকে অন্তর্ভুক্ত করে রাখা। যাতে করে নিজের সুস্বাস্থ্যের পাশাপাশি বাচ্চার সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।

Leave a Comment